address
278/3, Kataban Dhal, New Elephant Road, Dhaka 1205.
[Beside Ashta Byanjan Hotel]
Contact 8801313774400 (WhatsApp)
‘প্রাচ্যনাট’। স্বাতন্ত্র্যসূচক এই নামটির কারণে শুরু থেকেই দলটির প্রতি আমাদের আগ্রহ তৈরি হতে থাকে। সেই অনেকটা সময় ধরে আমাদের নাট্যাঙ্গনে নাটকের বিষয় ও আঙ্গিকে গতানুগতিক রীতি-পদ্ধতি বা প্রথাবদ্ধতা জেঁকে বসেছে। মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রমী দু-একটি ভিন্ন উদ্যোগ আমাদের আগ্রহ-আকাক্সক্ষাকে চাড়িয়ে দিলেও সামগ্রিকভাবে নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে স্বকীয় চিন্তা-চেতনার প্রসার এখনো হয় নি। অনেক ক্ষেত্রে বাংলানাটকের স্বতন্ত্র বিষয় ও আঙ্গিকবৈশিষ্ট্যকে বাহুল্য বা অনাবশ্যক বিবেচনা করতে অনেকে দ্বিধা করেন না।
অঞ্চলভেদে বা সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন শিল্পাঙ্গিক হওয়াই স্বাভাবিক। নাট্যশিল্পের উদ্ভব ও বিকাশের বিভিন্ন গতিভঙ্গিতেও এই সত্য প্রমাণিত। প্রাচ্যের নাট্যকলার আঙ্গিকেও একটি বিশিষ্ট রূপ রয়েছে। নাটকের পাÐুলিপি থেকে শুরু করে প্রয়োগের প্রতিটি পর্যায়ে সেই বিশিষ্টতা আছে। কিন্তু বাংলানাট্যকলার উদ্ভব ও বিকাশের ইতিহাসে দুঃখজনকভাবে দূর ইউরোপীয় রূপ ও রীতির আবদ্ধতায় বাংলানাটকের উপস্থাপনা আধুনিকমঞ্চে এখনো নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানকার নাট্যাঙ্গনের একঘেঁয়ে মঞ্চ-উপকরণ, পদ্ধতি এবং অপরাপর প্রথাবদ্ধতার প্রতিকূলে অবস্থান নিয়ে ‘প্রাচ্যনাট’ অবশ্যই নতুন আশা-আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রটি তৈরি করেছে। আমরা আশা করতে পারি, সেলিম আল দীনের দেয়া নাম (প্রকৃতপক্ষে সেলিম আল দীনের ‘প্রাচ্য থিয়েটার’ আর দলের প্রস্তাবিত ‘নাট মন্দির’ এর সমন্বয়ে চূড়ান্ত হয় ‘প্রাচ্যনাট’-সম্পাদক) নিয়েই কেবল নয়, ওই বিশিষ্ট নাট্যজনের গবেষণায় যে নিজস্ব বা দেশজ নাট্যরীতির কথা আমরা জানলাম, তার যথার্থ প্রয়োগ চর্চাতেও ‘প্রাচ্যনাট’ এগিয়ে আসবে। তবেই নামটির স্বাতন্ত্র্যময় ব্যঞ্জনা কার্যকররূপে প্রমাণিত হবে।
‘প্রাচ্যনাট’ বেশ স্বল্প কার্যকালে চারটি প্রযোজনা দর্শকের সামনে এনেছে। সার্কাস সার্কাস তাদের চতুর্থ প্রযোজনা। রচনা ও নির্দেশনা আজাদ আবুল কালাম। আটানব্বইয়ের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সার্কাস সার্কাস মঞ্চে এসেছে।
‘প্রাচ্যনাট’ সংগঠনটির গোড়াপত্তন একটু অন্যরকম। দুটি সাজানো বা জৌলুসের ঘর থেকে দুদল তরুণ গড়ে তুলেছে ‘প্রাচ্যনাট’। দলছুট এই তরুণরা বেশ সহজেই একই নামের ব্র্যাকেটবন্দি আরও দু-একটি দলের জন্ম দিতে পারতেন। নতুন দল গঠন করার জন্য মলিঁয়ের থেকেই হোক বা নিজেদের ‘বিশেষ প্রতিভা’ খাঁটিয়ে হোক, ‘হাসির নাটক’. ‘দম ফাটানো হাসির নাটক’ মঞ্চে এনে হৈ হুল্লোড়ও করতে পারতেন। তারা তা করেন নি।
সার্কাস সার্কাসের শুরুতে মঞ্চ জুড়ে ধোঁয়ার কুÐলী, সার্কাসের খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দেহ ভঙ্গিমার স্থির দৃশ্যরূপÑএরই মধ্যে সহসা কথা বলে ওঠেন সার্কাস দলের প্রধান সাধন দাস। এরপর একে একে উন্মোচিত হতে থাকে দুটি ভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া অভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ঘটনা এবং দৃশ্যমালা। নাটকের অন্তিমে গিয়ে বোঝা যাবে যে, শেষদৃশ্য দিয়েই নাটকের শুরুটা হয়েছিল।
দুটো স্বতন্ত্র ঘটনার প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সার্কাস সার্কাস নাট্যাবয়াব। মুক্তিযুদ্ধকালে বরিশাালে এবং বিশ বৎসর পরে কক্সবাজারে ঘটে যায় প্রায় সমান ঘটনা। ১৯৭১ এ মৌলবাদীদের তাÐব থেকে রক্ষা পায় নি বরিশালের কিংবদন্তী সমান লক্ষণ দাসের সার্কাস। বিশ বছর পরও যেন সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটে স্বাধীনবাংলার আর এক জনপদে। এখানেও (কক্সবাজার) সেই মৌলবাদীরা অসামাজিক কার্যকলাপের দোহাই দিয়ে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেয় সার্কাস প্যান্ডেল। নৃশংসতার এই দুটি অধ্যায়কে আজাদ আবুল কালাম নিপুণভাবে মঞ্চে তুলে এনেছেন। বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরল কথনভঙ্গিমায় এক একটি চরিত্র প্রাণবন্ত নাট্যমুহূর্ত নির্মাণ করেছে।
প্রায় প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর একাধিক ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের চরিত্ররূপায়ণ এই প্রযোজনার বিশেষ একটি দিক। বিশেষ ভাষা-ভঙ্গি এবং অভিনয়ের বিভিন্ন ধরন প্রত্যেকটি চরিত্রকে স্পষ্ট ব্যঞ্জনা দিয়েছে। প্রযোজনাটির প্রায়োগিক অন্যান্য দিক (মঞ্চ, আলো, পোশাক ও সংগীত) নিয়ে সবিস্তারে আলোকপাত বর্তমান পরিসরে সুযোগ নেই। তবে নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায় যে, বর্তমানকার আপাত স্থবির নাট্যাঙ্গনে ‘প্রাচ্যনাটে’র এ নাট্যঅভিযাত্রা আমাদেরকে আশান্বিত করে।
সামগ্রিকভাবে আটানব্বইয়ের নাট্যাঙ্গনকে হয় তো অনেকে নৈরাশ্যের চোখে দেখে থাকবেন। সে দেখাতে সত্যও আছে। কিন্তু আরো সত্য এই যে, গভীর প্রাণবন্ত মগ্নতায় নির্মিত বনপাংশুল, ক্রুসিবল, এ ডলস হাউস, প্রাকৃতজন কথা, সার্কাস সার্কাস বা এরকম আরও দু-একটি প্রযোজনা যাবতীয় স্থবিরতায় আক্রান্ত নাট্যকার্যক্রমের বিপরীতে অনেক বেশি শক্তিমান হয়ে প্রতিভাত হয়Ñআমাদেরকে আশার আলো দেখায়।
[নাটক: সার্কাস সার্কাস। রচনা ও নির্দেশনা: আজাদ আবুল কালাম। মঞ্চ, আলো ও পোস্টার ডিজাইন: সাইফুল ইসলাম। পোশাকপরিকল্পনা: কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আবহসংগীতপরিকল্পনা: রাহুল আনন্দ। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৯৮। একটি ‘প্রাচ্যনাট’ প্রযোজনা]
কামালউদ্দিন কবির ([email protected]): নাট্যশিক্ষক ও নির্দেশক
278/3, Kataban Dhal, New Elephant Road, Dhaka 1205.
[Beside Ashta Byanjan Hotel]
Contact 8801313774400 (WhatsApp)