address
278/3, Kataban Dhal, New Elephant Road, Dhaka 1205.
[Beside Ashta Byanjan Hotel]
Contact 8801313774400 (WhatsApp)
সময়টা ২০১৮ সালের জুন মাস। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা ঊনিশজন সৌভাগ্যবান একত্রিত হলাম ‘সাংহাই থিয়েটার একাডেমি’তে। চীনের ‘সাংহাই থিয়েটার একাডেমি’ পৃথিবীর অন্যতম নাটকের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যারা প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশজন বাছাই করে তাদের মাসব্যাপী চাইনিজ অপেরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। ক্লাসের প্রথম দিনেই আমাদেরকে তিনটি দলে ভাগ করা হলো ভিন্ন তিনটি পিকিং বা চাইনিজ অপেরায় অভিনয় করার জন্যে। তাও আবার অভিনয় করতে হবে চাইনিজ ভাষায় এই এক মাসের মধ্যে। এসব কথা শুনে আমরাতো কয়েকজন বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কারন একে তো আমরা চাইনিজ ভাষা জানি না, তার উপরে পিকিং অপেরা বা চাইনিজ অপেরার অভিনয় কৌশল সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞানও আমাদের নেই। আমাদের সাধারন ধারনা যে পিকিং অপেরা বা চাইনিজ অপেরা মানেই লাফ-ঝাপ, মার্শাল আর্ট, অ্যাক্রোবেটিকস, উচ্চস্বরে গান ইত্যাদি। শিক্ষক জানালো ভয় পাবার কোনো দরকার নেই। প্রশিক্ষণের জন্যে তিনটি দলের সাথেই সবসময় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক, নির্দেশক, সহকারী নির্দেশকের একটা ছোটো দল সংযুক্ত থাকবে।
শুরু হলো আমাদের চাইনিজ অপেরার প্রশিক্ষণ। অঞ্চল ভেদে অনেক ধরণের চাইনিজ অপেরা রয়েছে তার মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত ও চীনের জাতীয় অপেরা হচ্ছে Jingju (চিংচু) বা পিকিং অপেরা । আমরা জানতে শুরু করলাম যে পিকিং অপেরা একটি বিশেষ মঞ্চ নাটকের ধরন যেখানে নাচ, গান, অভিনয় ও বিভিন্ন শারীরিক কসরতের সমন্বয়ে উপস্থাপন করা হয়। সম্পূর্ন বাস্তবকে নকল করে এটা উপস্থাপন করা হয় না। এর অভিনয় রিয়েলিস্টক নয় স্টাইয়ালাইজড, এক বিশেষ ধরনের অভিনয়। তাই বিবিধ কাল্পনিক ও সাঙ্কেতিক বিষয়াদি সংযুক্ত করে চরিত্রদের মঞ্চে উপস্থাপনের জন্য সৃষ্টি করা হয়।
চাইনিজ অপেরায় নির্দিষ্ট কিছু চরিত্র থাকে। সে সকল চরিত্রের অভিনয় কৌশল নির্দিষ্ট থাকে। তবে একটি চরিত্র থেকে অন্য একটি চরিত্রের ধরন আলাদা। তাই একজন অভিনেতা একটি চরিত্রকে উপস্থাপন করার অনুশীলন করেন। চরিত্রসমূহ লিঙ্গ, বয়স, ব্যক্তিত্ব, পেশা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি অনুসারে ভাগ করা হয়। প্রধানত চাইনিজ অপেরাতে আমরা চারধরনের চরিত্র দেখতে পাই।
যথা: Sheng(শেং), Dan (তান), Jing (চিং) ও Chou (ছৌ)। শেং চরিত্র হচ্ছে প্রধান চাইনিজ অপেরার পুরুষ চরিত্র, আর তান হচ্ছে মহিলা চরিত্র। চিং অর্থাৎ ‘অঙ্কিত মুখ’ চরিত্র মূলত অন্যান্য মুখ্য চরিত্রের সহায়ক পুরুষ চরিত্রসমুহ যাদের চরিত্রানুযায়ী মুখ আকাঁ থাকে। ছৌ চরিত্র মুলত চাইনিজ অপেরার সং। সং চরিত্র বিনোদনের জন্য হলেও প্রধান চরিত্রের সহকারি হিসেবেও বিশেষ ভুমিকা পালন করে। এই চারটি মুল চরিত্রগুলোকে তাদের অভিনয়ের উপস্থাপন কৌশল ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আরো শ্রেনী ও উপশ্রেনীতে বিভাজন করা হয়েছে।
চাইনিজ অপেরার গল্প, অভিনয়, মঞ্চসজ্জা, সঙ্গীত ইত্যাদি সকলকিছু মুলত দুইভাগে বিভক্ত; সামরিক এবং বেসামরিক। সামরিক চাইনিজ অপেরাগুলোতে দেখা যায় রাজাদের বীরত্ব, যুদ্ধ ইত্যাদি। তাই এ জাতীয় অপেরার গল্পের মুল উপজিব্য পূর্ববর্তী চাইনিজ স¤্রাট, রাজা, দেবতা, বীর সৈণিক, দার্শনিকদের জীবন।
আর বেসামরিক অপেরাগুলো হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন যার মুল উপজিব্য হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগল্প। বর্তমানে আধুনিক চাইনিজ অপেরায় অন্যদেশের বিখ্যাত মঞ্চনাটকগুলোকে এই বিশেষ ফর্মে উপস্থাপন করার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচেছ। এর মধ্যে বার্টল্ট ব্রেখট-এর ‘দি ককেশিয়ান চক সার্কেল’, হেনরিক ইবসেন-এর ‘ হেডা গেবলার’, অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের ‘মিস জুলি’ উল্লেখযোগ্য।
প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কয়েকটি চাইনিজ অপেরা দেখার সৌভাগ্য হলো আমাদের। চাইনিজ অপেরার উপস্থাপন খুবই আকর্ষণীয়। এর পোষাক থেকে শুরু মঞ্চ সজ্জা, প্রপস, রূপসজ্জা, সংগীত সহ সকল কিছুতেই দেখা যায় আধিক্য এবং বর্ণিল। আমাদের দেশের অনেকটা যাত্রার মতো বিশেষায়িত উচ্চস্বরের সংলাপ, বাহারি অভিনয়, শারীরিক কসরত ও উচ্চ মাত্রার সংগীত ইত্যাদি সর্বদা দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখে। যতগুলো চাইনিজ অপেরা দেখেছি সবগুলোতেই আমরা অবাক হয়েছি। আরো অবাক হয়েছি রাতে যখন হোটেলে ফিরে টিভিতে দেখেছি যে চাইনিজ অপেরার প্রচার-প্রসার ও সংরক্ষণের জন্য চাইনিজ সরকার একটি চ্যানেল চালু করে রেখেছে যার নাম সি সি টি ভি-১১। এই চ্যানেলের সম্প্রচারের প্রধান বিষয় হচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ অপেরা। অবাক হওয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখিয়েছে যে আমাদের দেশেও হয়তো কোনো একদিন বাংলাদেশের থিয়েটার নিয়ে একটি টিভি চ্যানেল শুরু হবে। যেখানে শুধু সম্প্রচার করা হবে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মঞ্চ নাটক, লোকজ নাটক, যাত্রা-পালা ইত্যাদি। মানুষ জানবে তার শিকড়কে।
-মো. শওকত হোসেন
শিক্ষক ও গবেষক
২৪ এপ্রিল, ২০২১
278/3, Kataban Dhal, New Elephant Road, Dhaka 1205.
[Beside Ashta Byanjan Hotel]
Contact 8801313774400 (WhatsApp)